মিশরে নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল খ্রীস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে।নীল নদকে কেন্দ্র করে মিশরের এ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বলে গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস মিশরকে বলেছেন “নীল নদের দান”(Gift of the Nile)।৫০০০-৩২০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়ের মিশরকে প্রাক-রাজবংশীয় যুগ বলা হয়।এ সময় মিশর কতগুলো ছোট ছোট নগর রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। এগুলোকে বলা হয় নোম।৩২০০ খ্রীষ্টপুর্বাব্দে “মেনেস” নামের এক রাজা সমগ্র মিশরকে একত্রিত করে একটি নগর রাষ্ট্র গড়ে তোলেন। দক্ষিণ মিশরের “মেস্ফিস” হয় এর রাজধানী। এভাবে মিশরে রাজবংশের সূচনা হয়।
ফেরাউন মূলত কারো নাম নয়।ফারাও হলো গ্রিক-রোমান কর্তৃক বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত প্রাচীন মিশরীয় রাজবংশের রাজাদের প্রচলিত উপাধি। বনি ইসরাইলিদের যুগের ধর্ম যাজক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের উপাধি। পরবর্তীতে বনি ইসরাইলিরা যখন রাজ্য শাসনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন যারা ঐ অঞ্চলের রাজা হতো তাদেরকে ফেরাউন বলে সম্বোধন করা হতো।
আমালেকা জাতির রাজার খেতাব ছিল ফেরাউন।মিশরের অধিবাসী কিবতীদের রাজার খেতাবও ছিল ফেরাউন। হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সময়ের (কিবতীদের শাসক) ফিরাউনের নাম নিয়ে মতভেদ রয়েছে-
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এমন এক ফেরাউনের আমলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন- যিনি রামেসিস ও পিথম নগরী নির্মাণ করেন। সে-ই হচ্ছেন দ্বিতীয় রামেসিস।
কেউ কেউ বলেন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম মাদিয়ানে অবস্থানকালে ক্ষমতাসীন ফেরাউনের (অর্থাৎ দ্বিতীয় রামেসিসের) মৃত্যু ঘটে এবং হযরত মুসার জীবনের পরবর্তী ঘটনাবলী সংঘটিত হয় দ্বিতীয় রামেসিসের উত্তরাধিকারী মারনেপতাহর রাজত্বকালে।
কেউ কেউ বলেন, হজরত মুসা আলাইহিস সালামের যুগের ফেরাউনের নাম ছিল ওলীদ ইবনে মাসআব ইবনে রাইয়ান। তার বয়স হয়েছিল চারশত বছরেরও অধিক। হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের যুগের ফেরাউনের নাম ছিল রাইয়ান। এ দুই ফেরাউনের মধ্যে ৪০০ বছর সময়ের ব্যবধান ছিল।
প্রাচীন মিশরের নতুন রাজ্যের সময় ফেরাউনরা ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতা ছিল। “বড় বাড়ি” বলতে তখন রাজাদের বাড়িকে বোঝানো হত কিন্তু মিশরীয় ইতিহাসের গতিপথের সাথে সাথে তা হারাতে বসে ছিল এমনকি রাজা, nswt এর জন্য ঐতিহ্যবাহী মিশরীয় শব্দের পরস্পরিক পরিবর্তনে মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছিল। যদিও মিশরের শাসকরা সাধারণত পুরুষ ছিল, ফেরাউন শব্দটা বিরলভাবে মহিলা শাসকদের হ্মেত্রেও ব্যবহার করা হত। ফেরাউনরা বিশ্বাস করত যে দেবতা হরুসের সাথে জীবনের দেহযুক্ত সমস্ত মিশরের পৌরাণিক শাসক এবং ওসিরিসের মৃত্যুতে।
এরা নিজেদেরকে সূর্যের বংশধর মনে করত। নিজেদেরকে দেবতা বলে মনে করায় তারা বংশের বাইরে কাউকে বিবাহ করত না। ফলে ভাইবোনেদের মধ্যেই বিবাহ সম্পন্ন হত। ফেরাউনরা মৃত্যুর পরও জীবন আছে বলে বিশ্বাস করত।
সুতরাং ফেরাউনদের নাম যাই হোক, তৎকালীন শাসকদের খেতাব ছিল ফেরাউন। ইতিহাসে এ সকল শাসকরা ফিরাউন নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন হল মিশরীয় সভ্যতা। নীল নদের দেশ মিশর। আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে নীলনদের তীরে গড়ে উঠেছিল এই সভ্যতা এবং টিকে ছিল ৩২৩ খৃস্ট পূর্বাব্দে গ্রীক সম্রাট আলেক্সান্ডারের আক্রমনে পর্যুদস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত। এর রহস্য পন্ডিতদের গবেষনার বিষয়। মিশরের উপর গড়ে উঠেছে পূরাতত্বের নতুন শাখা নাম Egyptology. প্রাচীন যুগের সপ্ত আশ্চর্্যে র মধ্যে আজও টিকে থাকা একমাত্র বিস্ময় মিশরের পিরামিড। কোথা থেকে উৎপত্তি, কিভাবে গড়ে উঠলো বিশাল পিরামিড, মন্দির,ওবেলিস্ক, বা স্ফিংসের মূর্তি সে রহস্য আজও সম্পূর্ন উদ্ঘাটিত হয় নি। নিত্য নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে গবেষনার ফলে, পালটে দিচ্ছে আগের ধারনা গুলোকে।
খৃস্ট জন্মের ৩১০০ বছর আগে রাজা মেনেস নীল নদের উভয় পাশের উত্তর এনং দক্ষিনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বসতিগুলোকে একত্রীভূত করে গোড়াপত্তন করেন মিশরীয় সাম্রাজ্যের। মেনেস হন প্রথম ফারাও।মেনেস জন্ম গ্রহণ করেন খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ সালে।তিনি নিম্ন (নীল নদের তীরবর্তি অঞ্চল) ও উচ্চ (নীল নদের তীর হতে দূরবর্তী অঞ্চল) মিশরকে একীভূত করে বৃহত্তর মিশর গড়ে তোলেন। এর পর বংশানুক্রমে ৩১টি রাজবংশ শাসন করেছেন নীল নদের দেশ মিশরকে। মোটামুটিভাবে এখানেই শুরু ধরা হলেও এর ও আগে এমনকি খৃস্টজন্মের ৭,০০০ বছর আগের মিশরীয় সাম্রাজ্যের শিলালিপি আবিস্কৃত হয়েছে।আমাদের যুগে প্রাচীন গ্রীক সভ্যতাকে যেভাবে জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎস বিবেচনা করা হয়, ঠিক একইভাবে ঐ সময়ের গ্রীক মনীষিরা মিশরীয় সভ্যতাকে জ্ঞান বিজ্ঞানের সুতিকাগার বিবেচনা করতেন। হেরোডেটাস, প্লেটো, পীথাগোরাস সবাই মিশরীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের খোজে উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন সেই সময়ের মিশরে।
নদী হল সভ্যতার প্রান কেন্দ্র। দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, চাষাবাস, প্রভৃতি কাজের জন্য প্রয়োজন ছিল পানি। প্রাকৃতিক জলাধার নদী ছিল পানির সহজলভ্য উৎস। তাই প্রাচীণ সভ্যতাগুলো ছিল নদীকেন্দ্রিক। উদাহরন স্বরুপ বলা যায় মেসোপটেমিয়া গড়ে উঠেছিল ইউফ্রেটিস, টাইগ্রিস নদীকে ঘিরে, ভারতবর্ষে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সিন্ধু নদীর তীরে। আফ্রিকার কেন্দ্রস্থল থেকে উৎপন্ন হয়ে মিশরীয় মরুভূমির মধ্য দিয়ে নীল নদ গিয়ে মিশেছে ভূমধ্যসাগরে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নীল নদে বন্যা হত। নীলনদের এই মৌসুমী বন্যা বয়ে আনত উর্বর পলিমাটি ফলে চাষাবাস করা সম্ভব হত। পানির সহজলভ্যতা এবং খাদ্যের নিশ্চয়তার কারনেই আদিম মানুষ বসতি গড়েছিল নীল নদের তীরে। নদের দুই পাশে ২০ কিলোমিটার চওড়া এবং নদী বরাবর ৫০০ কিলোমিটার এলাকা ব্যাপী গড়ে উঠেছিল এই সাম্রাজ্য।
প্রাচীন মিশরে ধর্ম এবং তাদের দেব দেবতারা কেমন ছিল? আদিম প্রস্তর যুগ থেকেই মিশরের নীল নদীর তীরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল স্থায়ী বসতি। তখনকার দিনের মিশর এখনকার মত মরুভূমির দেশ ছিল না । পশু শিকার এবং চাষাবাসের জন্য আদর্শ স্থান ছিল নীল নদের দেশ মিশর। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের সাথে এল রীতিনীতি বিশ্বাস । কিভাবে বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের সৃস্টি হল , সূর্য্য, বাতাস, বৃস্টি, বন্যা ইত্যাদি কেন হয়? মানূষ মারা যায় কেন? মৃত্যুর পর কি হয়? ইত্যাদি ভাবনা স্বভাবতই তাদের ভাবিয়ে তুলেছিল। জন্ম নিয়েছিল ধর্মীয় বিশ্বাসের। প্রথমে তা ছিল যাদুবিদ্যাকে ঘিরে। অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস থেকে জন্ম নিল দেব দেবতা এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস। সমাজ বিবর্তনে এবং সভ্যতার বিকাশের সাথে ধর্ম ছিল ওতপ্রোতভাবে জড়িত।প্রাচীন মিশরীয়রা তাদের ধর্ম বিশ্বাসকে লিখে রেখেছেন পাথরের গায়ে , সমাধি ক্ষেত্রে, গড়ছিলেন দেব দেবতাদের মূর্তি, মন্দির ইত্যাদি।
দেব দেবতারা
প্রাচীন মিশরে ২০০০ এর ও বেশী দেব দেবীর অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া যায়। এই দেব দেবতাদের মধ্যে স্থান কাল এবং পাত্রের পার্থক্য ছিল। কোন এক স্থানে যে দেবতা শ্রেষ্ঠ হিসেবে পূজিত হতেন অন্য স্থানে ছিলেন পৃথক অন্য কোন দেবতা, আবার মিশরীয় সাম্রাজ্যের গোড়ার দিকের দেবতারা পরবর্তীকালের দেবতাদের থেকে পৃথক। এদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন মিশরীয় রাজা বা ফারাও যারা পরবর্তীতে দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত হন। কেউ কেউ আবার ছিলেন ক্ষতিকর দেবতা । উল্লেখযোগ্য দেবতারা ছিলেনঃ- রা বা রে(Re), তাহ(Ptah) ওসিরিস(Osiris), আইসি্স(Isis) হোরাস(Horus), সেথ(Seth), হাথর(Hathor), আনুবিস(Anubis), থথ(Toth), আটেন(Aten), আমুন(Amun), বাস্তেত(Bastet)।
তাহ- মিশরের মেমফিসে( কায়রো’র নিকটবর্তী স্থান) উপাস্য তিন দেবতার প্রধান ছিলেন তাহ।অন্য দুই জন দেবতা ছিলেন তার পত্নী সেখমেত এবং পূত্র নেফেরতেম। শেখমেত ছিলেন সিংহের মাথাওয়ালা দেবী । তিনি সুর্যদেবতা রা’এর শত্রুদের ধ্বংশ কারী ছিলেন আর নেফেরতেম ছিলেন পদ্ম দেবতা।
তাহ’র প্রতিকৃতি হল দেবতার পীঠস্থানে হাতে লাঠিওয়ালা মমিকৃত পুরুষ হিসেবে। তিনি ছিলেন সৃস্টিকর্তা দেবতা । তিনি তার চিন্তাশক্তি এবং নির্মান ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবী সৃস্টি করেন।
মেমফিসের বিশ্বাসমতে দেবতা সোকারের সাথে তিনি ছিলেন সমাধিক্ষেত্র রক্ষাকারী মৃতদের দেবতা।গ্রীক পন্ডিতদের মতে তাহ ছিলেন ধাতুকর্মের দেবতা হেফেস্টাস।
রে (Re) রে ছিলেন সূর্য্য দেবতা। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত সূর্য্য হল জীবনের প্রতিচ্ছবি। সূর্য্যোদয়, সূর্য্যাস্ত, পূনরায় উদয় হওয়ার মতই জন্ম, মৃত্যু এবং পূনর্জন্ম। রা দেবতা কে সূর্য চাকতি বা মাথায় সূর্য্য চাকতি বয়ে নিয়ে বেড়ানো ঈগল পাখির মাথা ওয়ালা একজন পুরুষ হিসেবে। তার প্রধান উপাসনা স্থল ছিল ইউনু বা হেলিওপোলিস( সূর্য্য নগরী) রা দেবতার বিভিন্ন রুপে আবির্ভূত হতেন, সকালে খেপরী( গুবরে পোকা ),বিকালে আটুম , এবং হোরাক্তি। গিজার স্ফিংসের মুর্তি হল হোরাক্তির প্রতিফলন। রা ছিলেন ৯ জন দেবতা বা গ্রেট ইনিয়াড( Great Ennead) প্রধান। তিনি ছিলেন পরকালের সর্বোচ্চ বিচারক। মিশরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে বিবেচিত রা-পুত্র ছিলেন একজন মিশরীয় ফারাও।
ওসিরিস- যে নয়জন দেবতা গ্রেট ইনিয়াড( Great Ennead) হিসেবে বিবেচিত হতেন তাদের একজন হলেন ওসিরিস। ওসিরিস ছিলেন পরকালের বিচারক , শস্য এবং পূনর্জন্মের দেবতা। তাকে দেখানো হয়ে থাকে একজন মমিকৃত রাজা হিসাবে। সেই সময়ের জনশ্রুতি মতে প্রতিহিংসাপরায়ন ভাই সেঠ কর্তৃক খুন হলেও রাজা ওসিরিস পূনর্জন্ম লাভ করেন। ওসিরিসের উপাসনার প্রধান কেন্দ্র ছিল এবিডোস(Abydos) । তার মৃত্যু এবং পুনর্জন্ম পালিত হত বাৎসরিক উৎসবের মধ্য দিয়ে। তিনি ছিলেন সার্ব্জনীন ভাবে পূজিত দেবতা। কারন সম্ভবত মিশরীয়রা ছিল পূনরজন্মে বিশ্বাসী এবং অনন্ত জীবন প্রত্যাশী।
আইসিস- শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় দেবী হিসেবে বিবেচিত আইসিস ছিলেন ওসিরিস পত্নী এবং হোরাসের মা। তার সম্মোহন শক্তি এবং পতিভক্তির জন্য সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন তিনি। আইসিস এবং ভগ্নি নেফথিস ছিলেন মৃতদের রক্ষাকারী। নেইথ এবং সেলকেত দেবীদের সাথে মৃতদের কফিন এবং অংগ প্রত্যঙ্গের পাত্র রক্ষা করতেন আইসিস। মিশরে মৃতদেহ থেকে লিভার এবং অনান্য প্রত্যংগ বার করে রাখা হত ঢাকনা দেওয়া জার বা পাত্রে এবং মৃতদেহকে মমী করে রাখা হত। মিশরীয়রা বিশ্বাস করত মৃতরা এক সময় পূনর্জন্ম লাভ করবে। সে জন্য দেহ কে মমী করে সংরক্ষন করত।
হোরাস- হোরাস হলেন আকাশের দেবতা। তিনি ছিলেন ওসিরিস এবং আইসিসের পূত্র। দেবতা সেথের হাতে ওসিরিস খুন হওয়ার পর তার জন্ম। মা আইসিস তাকে বড় করেন এবং ৮০ বছর ধরে যুদ্ধ করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেন। তিনি মিশরের শাসনকর্তা হিসেবে অভিসিক্ত হন। তিনি হলেন রাজাদের রক্ষাকারী পৃষ্ঠপোষক দেবতা। তিনি গ্রেট ইনিয়াড ৯ জন দেবতাদের একজন। ফ্যালকন বা ঈগল পাখির মাথাওয়ালা পুরুষ দেবতা হোরাস হলেন রাজাদের দেবতা। হোরাসের উপাসনাস্থল হল বেহদেত এবং হিয়েরাকোনপলিস।
সেথ- সেথ হলেন লাল দেবতা। তিনি মরুভুমি ঝড়ঝঞ্ঝা এবং ধ্বংশের দেবতা। তার প্রতিকৃতি বিভিন্ন প্রানী যেমন শুকর, গাধা, জলহস্তী বা ওকাপি ইত্যাদি বিভিন্নভাবে বিবেচিত হয়।তিনি ছিলেন দেবতা ওসিরিসের ভাই এবং দেবতা হোরাসের প্রতিদন্দ্বী। মিশরীয়রা তাকে ক্ষমতা কে ভয় এবং ভক্তি করত। গ্রীকরা তাকে দানব টাইফন এর সমকক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
হাথর- দেবতা হাথর হলেন প্রেমের দেবী। তার প্রতিকৃতি হল গরু বা গরুর মাথা কিংবা শিং এবং কানওয়ালা মানবী। দেবী হাথর সঙ্গীত এবং মদিরার দেবী। তার উপসনাস্থল ছিল ডেনডেরা। তিনি মাতৃত্ব , সৃস্টির দেবী। অবিবাহিত মেয়েদের রক্ষাকারী এবং রাজাদের অন্নদাতা। দেবতা বেস এর সাথে তিনি মহিলাদের সন্তান জন্মের সময় রক্ষা করতেন। তিনি মিশরের সিনাই এলাকার খনি রক্ষাকারী দেবী, হোরাসের পত্নী এবং হোর-মা তাওয়ী’র মা। গ্রীক পৌরানিক ভালবাসার দেবী আফ্রোদিতি’র সমকক্ষ।
আনুবিস- আনুবিস হলেন শেয়াল দেবতা। সমাধিক্ষেত্রে শেয়ালের আনাগোনা থেকেতাকে মিশরীয়্রা মৃতদেহের দেবতা হিসেবে পূজা করতে থাকে। কাল শেয়ালের বা বন্য কুকুরের দেহ অথবা শেয়ালের মাথা ওয়ালা দেবতা আনুবিস। ওসিরিসের আগে আনুবিসকে পূজা করা হত মৃতদেহ সৎকারের দেবতা এবং সমাধিক্ষেত্রের রক্ষক হিসেবে। আনুবিসের কাছেই মিশরীয়রা মৃতদের জন্য প্রার্থনা করতেন। তিনি ওসিরিসের মৃতদেহকে সর্বপ্রথম মমীতে রুপান্তরিত করেন এবং সেই থেকে মমী প্রস্তুতের দেবতা হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন। মৃত্যুর পর তিনি মৃতব্যাক্তিদের পথ দেখিয়ে থাকেন।
থথ – থথ হলেন চন্দ্র দেবতা। তার প্রতিকৃতি হল সারস শ্রেনীর পাখি আইবিসের মাথাওয়ালা একজন পুরুষ। তার কাছে আইবিস পাখি এবং শুকর হল পবিত্র। লেখন পদ্ধতির আবিস্কারক থথ । মৃত্যুর পর বিচারের রায় তিনি লিখে রাখতেন মিমুসপ গাছে। থথের কাছে থাকা বইতে পৃথিবীর সমস্ত তথ্য থাকত। তার প্রধান উপাসনা স্থল হল হারমোপলিস ( এখনকার এল- আশুমুনেইন) গ্রীক পুরানের দেবতাদের দুত হারমিস এর সমকক্ষ ধরা হয় থথকে।
আমুন- আমুন শব্দের অর্থ অদৃশ্যমান। তার প্রতিকৃতি হল মাথায় লম্বা দুই পালক সমৃদ্ধ টুপি এবং হাতে দন্ড নেওয়া একজন পুরুষের। তার প্রিয় হল ভেড়া এবং রাজহাস যারা পুরুষত্বের চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়। মিশরের মধ্যম রাজবংশের যুগে তাকে “রা” এর সাথে একসাথে “আমুন-রা” হিসেবে পূজা করা হত। তার উপসনার স্থল ছিল থিবীস(এখনকার লুক্সর) এ । অস্টাদশ রাজবংশের যুগে আমুন সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা হিসেবে পুজিত হন। দেবতাদের রাজা হিসেবে পূজনীয় আমুনের সুবিশাল মন্দির “ কারনক” এ অবস্থিত।
আটেন- আটেন হলেন সূর্য্য চাকতি।। সুর্য্য চাকতি হিসেবে স্বর্গের দেবতারা দৃশ্যমান হতেন। ফারাও আমেনহোটেপ-৪ এর রাজত্বকালে আটেন সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ফারাও নিজের নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন “আখেনাটেন” বা আটেনের স্বর্গীয় আত্মা। তার সময়ের আঁকা ছিবতে আটেনকে দেখান হয় হাতের উপর সুর্য্য চাকতি হিসেবে। আখেনাটেন তার স্ত্রী নেফেরতিতিকে নিয়ে নতুন এক নগর বসবাস শুরু করেন যেখানে আটেন, রা এবং আখেনাটেনের পূজা হত। আটেন ছিলেন রাজাদের দেবতা, সাধারন মিশরবাসীদের কাছে আটেনের গুরুত্ব ছিল না।
বাস্তেত- বাস্তেত ছিলেন বিড়াল দেবী। তার প্রতিকৃতি হল বিড়ালের মাথা ওয়ালা এক নারী। তিনি ছিলেন কুমারী তৎসত্বেও তার একপূত্র ছিল, নাম মিহোস। গ্রীক পোরানিক শিকারের দেবী আর্টেমিসকে বাস্তেতের সমক বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
No comments:
Post a Comment