ইতিহাসঃ ইতিহাসের এক ভয়ংকর অধ্যায়, “গজনীর মাহমুদ" পার্ট- ২ - Human Timelines Myth & History

Hot

Post Top Ad

Saturday, February 17, 2018

ইতিহাসঃ ইতিহাসের এক ভয়ংকর অধ্যায়, “গজনীর মাহমুদ" পার্ট- ২

খলিফার আশীর্বাদ ধন্য এবং তারদক্ষিন হস্ত ( ইয়ামিন-উদ দৌলা)খেতাব প্রাপ্ত মাহমুদের ‘জিহাদী’মানসিকতা’ দশ গুন বেড়ে গেলোখলিফার কাছের মানুষ হবার পর।একের পর এক চললো তার ‘ধ্বংসেররথ’-----
১০০০ সালে মাহমুদ কিছু সীমান্ত অঞ্চলদখল করে সেখানে নিজের প্রশাসকনিযুক্ত করে। ওই অঞ্চলে বসবাসকারিহিন্দুদের ধর্ম পরিবর্তনে বাধ্য করাহোলো, যারা করলো না, তারা মরলো। তাদের উপাসনালয় মাটিতে গুড়িয়ে দেওয়া হলো।
১০০১ থেকে ১০০৩ সাল অবধি তার কেটে গেলো, ওয়াইহিন্দ (প্রাচীন পুরুষপুর =পেশোয়ার) দখল করতে। রাজা

জয়াপালা বন্ধী হন। তার ১৫ জন সেনাপতি এবং আত্মীয় বন্ধী হলেন। এদের একজন ‘সুখপাল’ মুসলমান হয়ে,নওয়াশা শাহ নাম নিয়ে, মাহমুদের অধীনে প্রসাশনের দ্বায়িত্ব পান। এটা ছিলো তার একটি চাল, রাজা জয়াপালেরজীবন বাচানোর জন্য। কিছু দিন পর যখন রাজা জয়াপাল নিজের প্রজা এবং রাজ্য রক্ষা না করতে পারার জন্য এবংচারিদিকে ‘জিহাদী তান্ডব’ দেখে আর সহ্য না করতে পেরে রাগে, দুঃখে, হতাশায় আগুনে আত্মাহুতি দেন। ঠিক তারপরেই সুখপাল বিদ্রোহ করে এবং হিন্দু হন। মাহমুদ তাকে পরাজিত করে, হত্যা করে। রাজা জায়াপাল ২৫০০০০(আড়াই লক্ষ--- একট স্বর্ন মুদ্রা ,যার নাম দিনার= ১২০ গ্রাম সোনা) স্বর্ন মুদ্রা মুক্তিপন দিয়ে তার এবং সুখপাল বাদেবাকী ১৪ জনের মুক্তি আদায় করেন। জয়াপালের পুত্র আনন্দপাল কাশ্মীরে চলে যান এবং তার স্বাধীনতা সংগ্রাম চালুরাখেন। তিনি, তার ছেলে ত্রিলোচন পাল এবং নাতি ভীম পাল, মাহমুদের সংগে যুদ্ধ করে শহীদ হন। বাকিবংশধরেরা, আত্মীয় স্বজন রা ধর্ম পরিবর্তন করে বেচে যায়। অনেকেই মাহমুদের অধীনে বেতনভুক ছোট বড়োসৈনাপত্য নিয়ে বেচে থাকে। এই ভাবে একটি শক্তিশালী এবং ঐশ্বর্য্যশালী হিন্দু রাজ্য চিরতরে মুসলমানী শাসনে চলেগেলো। আজ সেই রাজ্যে চলছে ভারত ভুমি থেকে বিচ্ছিন্নতার আন্দোলন (কাশ্মীর), সেই শাহী সাম্রাজ্যের বর্তমানবাসিন্দা, যারা এক সময় সনাতনি ছিলো, (পাকিস্তান, আফগানিস্তান) তাদের বংশধরেরাই তাদের পুর্ব পুরুষদেরসংষ্কৃতির ধারক বাহকদের সর্বনাশ করতে ঊঠে পড়ে লেগেছে।

মাহমুদের সেক্রেটারী ছিলো আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী। সেই ‘ঊথবী’ বলছেন, ভেরা, মুলতান, যেখানে একটিওমুসলমান ছিলো না, সে গুলো সব সম্পুর্ন ভাবে মুসলিম হয়ে গেলো, কোনো পুতুল পুজা কারী আর রইলো না। তাদেরমন্দির ধুলায় মিশে গেলো অনেক মসজিদ তৈরী হলো”।
এই উথবী একজন নামী লোক। এর লেখা দিয়েই শেষ করবো ৩০ বছরের ধ্বংসের বিবরন। পুরো বিবরন লিখতেগেলে প্রায় একটি বই হয়ে যাবে। একের পর এক শহরের পর শহর, গঞ্জের পর গঞ্জ মাহমুদের লুটের আর ধ্বংসেরসামিল হলো। জন জীবনে সৃষ্টি হলো এক নিদারুন ত্রাসের। মহিলাদের মান সম্মান ধুলায় লুটিয়ে গেলো, মন্দিরের পরমন্দির ধুলায় মিশে গেলো। এটাই হচ্ছে মুল কথা। ১০১৫ সালে কাশ্মীর, এবং এর আগে পরে ১৯৩০ সালের মধ্যেভেরা, মুলতানের দখল শক্ত পোক্ত করে, মথুরা,বারান (বুলন্দসর), কনৌজ (কানপুর) সব জায়গার একই দশা হলো।সারা উত্তর পশ্চিম ভারত তখন এই মাহমুদের ‘জিহাদী তান্ডব’ থেকে থর থর করে কাঁপতে থাকে, কখন মাহমুদআসবে ( কব গব্বর আ জাঁয়েগা) । ১০২৩ সালের চৌদ্দতম তান্ডবে কিরাত,নুর,লোকাট আর লাহোর ধ্বংস এবংপরিবর্তিত হয়ে গেলো ্সব প্রাচীন ঐতিহ্য।
মন্দির লুট করা এবং সেটাকে অপবিত্র করা মাহমুদের একটি খেলা ছিলো। কতো মন্দির তার তান্ডবে শেষ হয়ে গেছেসেই তালিকা আজ আর দিয়ে লাভ নেই। কেউ বিশ্বাস করবে না, বলবে প্রমান কি? যে মন্দির আর দাঁড়িয়ে নেই,বেশীর ভাগ স্থানে অন্য প্রার্থনা স্থল তৈরি হয়েছে, তা বলতে গেলে বিরোধীরা চীৎকার শুরু করবে। ছোট গুলো বাদদিয়ে শুধু মাত্র বড়ো দুটির কথা এখানে লিখবো। ---
থানেশ্বরের ‘চক্রস্বামীর’ মন্দির লুট এবং ধ্বংস করে মন্দিরের ‘বিষ্ণু মুর্তি’ নিয়ে গিয়ে গজনী শহরে তৈরী‘হিপোড্রোমে’ ফেলে দেওয়া হয়েছিলো। মাহমুদ নিজে মথুরা নগরী এবং সেখানকার মন্দিরের সৌন্দর্য্যের প্রশংষাকরেছে। সেই মথুরা নগরীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং বিখ্যাত ‘কৃষ্ণ মন্দির’ লুট করে সে অগাধ ঐশ্বর্য্য হাসিল করে, আরমন্দিরের সব মুর্তি গুড়িয়ে দেয়। উথবীর কথায় (মাহমুদের সেক্রেটারী আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী) একমাত্র কনৌজেপ্রায় ১০০০০ হাজার মন্দির ধ্বংস হয় ( আমি বাড়া বাড়ি বলে মনে করছি—কারন এতো মন্দির থাকা এবং তা ধ্বংসকরা কি সহজ ব্যাপার? ) যারা এই সব অঞ্চলে বাস করতো, তাদের মধ্যে যারা ধর্ম পরিবর্তনে রাজী ছিলো না তারাহয় পালিয়ে অন্যত্র্ গেলো (আমার বাবা এবং আমার মতো উদবাস্তু হলো), নইলে মরলো (ল্যাটা চুকে গেলো)।
চক্রস্বামী মন্দিরের মতো দশ হলো গুজরাটের ‘সোমনাথ’ মন্দিরের। সেখানকার শিব মুর্তি নিয়ে গেলো গজনীতে।তার ভাংগা টুকরো দিয়ে তৈরী হলো গজনীর জামা মসজিদের সিড়ি। সেই গজনী ও নেই ,মসজিদ আর নেই। সবপুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে মাহমুদেরই এক শত্রু যাদের ওপরে মাহমুদ অত্যাচার করেছিলো। তারাও ছিলোআফগানিস্তানের এক উপজাতি। সোমনাথের শিব মন্দিরের কিছু ভগ্ন অংশ পাঠানো হয়েছিলো খলিফার কাছে। সেইটুকরো শেষ মেশ পৌছায় তুরষ্কে। তাই দিয়ে তৈরী হয় ইস্তানবুলের বিখ্যাত “তোপকাপি” মসজিদের সিড়ি। (আমারকোনোদিন বিশ্বাস হয়নি, যতোদিন না আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি ২০১২ সালে সেই সিড়ি, যেখানে পরম গর্বেরসংগে এই ইতিহাস লেখা আছে। ছবি তোলা নিষেধ না হলে দেখাতাম সেই স্ক্রিপ্ট পাথরে খোদাই করা।)
সোমনাথ মন্দির ধ্বংস এবং লুট মাহমুদের কাছে এক পবিত্র কাজ ছিলো সেটা সে নিজেও লিখে রেখে গেছে ‘ফতেনামা’ তে। এই পবিত্রতা এই জন্য যে, ঠিক একই ভাবে মক্কার কাবা শরীফে , যার নাম ছিলো ‘আল-মান্নাত’সেখানকার মুর্তি ভেঙ্গেছিলেন নবী নিজে। সোমনাথ লুট এবং ধ্বংসের সাল টা ছিলো ১০২৬। তার এই কাজের জন্যপরবর্তি সময়ে সুফী, দরবেশ রা মাহমুদের অতি উচ্চ প্রশংষা করে গেছে। সমসাময়িক ঐতিহাসিক, কুয়াজ্জিনি, ফার-হিস্তা এবং মাহমুদের সেক্রেটারী আবু নাসের মুহাম্মদ উথবী, সবাই মাহমুদের ৩০ বছর ব্যাপি বর্বরতার বিবরন লিখেগেছেন নিখুত ভাবে। সেই লিপিতে তার অতি উচ্চ প্রশংষা করতে গিয়ে আসল সত্য চেপে রাখতে পারেন নি। আসলসত্য চেপে রাখলে মহিমা কম হয়ে যায়। এই মুসলিম ঐতিহাসিকরা সেই সময় মাহমুদের বর্বরতাকে বর্বরতা না বলেধর্মীয় কাজ বলেছেন। তাই আসল সত্য বেরিয়ে এসেছে।
সোমনাথ লুটের খবর খলিফার কাছে পৌছালে, খলিফা আল কাদির বিল্লা খুশীতে বিশাল জাক জমক করে উৎসবপালন করে। মাহমুদকে তিনি এবারে দেন নতুন এক উপাধী—‘খাপ-উদ-দৌলা ওয়া আল ইসলাম”। সেই সংগে তাকেহিন্দুস্তানের সম্রাট বলে ঘোষনা করে দিলো। সম্রাট মাহমুদ এই প্রথম লাহোর থেকে নিজ নামে মুদ্রা প্রচলন করলো।
মাহমুদ যে বিপুল ধন দৌলত ভারত থেকে লুট করে নিয়ে যায় ৩০ বছর ধরে তার হিসাব কষতে চার্টার্ড একাউন্টেন্টহিম সিম খেয়ে যাবে। আমাদের ঐতিহাসিকেরা বেমালুম চেপে গেলেও, মাহমুদের সেক্রেটারী সেই আবু নাসের মুহাম্মদউথবী সেই লুটের বহর স্পষ্ট করে লিখে রেখে গেছে, কারন সেক্রেটারী হিসাবে সেই কাজ তাকে করতে হতো।আমাদের ইরফান হাবিব, রোমিলা থাপার এবং অন্যান্য ভারতীয় ঐতিহাসিকেরা এই সত্য ভারতবাসীর থেকে চেপেগেলেও ঐতিহাসিক ‘কে এস লাল’ এর মতো কিছু ঐতিহাসিক আজো তাদের বিবেক বিদেশীদের (আরবী /তুর্কি) কাছেবেচে দেন নাই। সেই কে এস লালের লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত করে ঐতিহাসিক Andrew G Bostom তৈরী করেছেনএক প্রামান্য দলিল, যার নাম “The legacy Of Jihad—Islamic Holy war and the fate of the Non-Muslims”, Published by ‘ Prometheus Books’, 59 John Glenn Drive, Amherst,New York- 14228 -2119. ( এই লেখা সেই কে এস লাল এবং Andrew G Bostom এর লেখাকে ভিত্তি করে। প্রমান যারা চাইবেন তারাঐ ঠিকানায় যোগা যোগ করবেন)

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad