গ্রীক দেশের ম্যাসিডোনিয়ার রাজা আলেকজান্ডার তার ১২ বছরব্যাপি সাম্রাজ্য বিস্তারের শেষ পর্য্যায়ে এসে পৌছান ভারত বর্ষেরদোড় গোড়ায়, সিন্ধু নদীর তীরে। তিনি ভাবতেন পৃথিবীর শেষপ্রান্ত অবধি জয় করবেন। মনে করতেন ভারতের পরেই পৃথিবীরশেষ। বাদ সাধলেন বর্তমান পাঞ্জাব (অবিভক্ত) এবং কাশ্মীরেররাজা পুরু। রাজা পুরু যে বীরত্বের সংগে যুদ্ধ করেন তার তুলনাহয় না।
আলেকজান্ডার যে বিশাল সাম্রাজ্য দখল করেছিলেন তার বেশীরভাগ অঞ্চলের রাজারা প্রায় বিনা
যুদ্ধেই তার বশ্যতা স্বীকার করে নেন। বিরোধিতা করার মতসাহস তারা কেউই করেন নি। যারা করেছিলেন তারা শাস্তিওপেয়েছিলেন। বর্তমান তুরষ্ক (এশিয়া মাইনর) ছিলো পারস্যসাম্রাজ্যের অধীন, পারস্য সম্রাট দারায়ুস -২ তার অধিপতি। তিনি বাধা দিলেন কিন্তু আলেকজান্ডারের অসাধারন যুদ্ধ পরিচালনার কাছেতিনি হার মানলেন এবং নিহত হলেন। আলেকজান্ডার মদ্যপ অবস্থায় এক রাতে তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ট নগরী ‘পার্সিপোলিস” পুড়িয়ে ছারখারকরে দিলেন । তার সৈন্য বাহিনী তিন দিন ধরে চালালো লুট পাঠ, নারী ধর্ষন । এই ঘটনার বীভৎষতা লোক মুখে (বিশেষ করে সিল্ক রুটেরব্যাবসায়ীদের মুখে গল্পে ছড়িয়ে পড়েছিলো সারা এশিয়া অঞ্চলে।) ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশী সময় লাগেনি। একে একে আলেকজান্ডারের বিজয়পথে বাধা হতে বেশী কেউ ই সাহস পায়নি।
হিন্দু রাজা পুরু ছিলেন অকুতোভয়। তিনি তার বিশাল সৈন্য বাহিনী প্রায় ১২০০০০ , যার মধ্যে প্রায় ৩০০০ হাতী ছিলো, নিয়ে সিন্ধু নদের পুর্বপাড় অবরোধ করে তার ঘাটি গেড়ে বসে রইলেন। অনেক চেষ্টা করেও আলেকজান্ডার সিন্দু নদ পার হবার কোনো উপায় খুজে বার করতেপারলেন না। এদিকে যুদ্ধ ক্লান্ত গ্রীক সৈন্য রা আর এগুতে চায় না। মৌসুমী বায়ূর প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। মশার কামড়ে টেকা দ্বায়। প্রায়৩ মাসের বেশী চেষ্টা করে ,সিন্ধু পার হতে না পেরে আলেকজান্ডার এক অভিনব ছলনার আশ্রয় নিলেন। প্রচার করে দিলেন যে তিনি গ্রীসেফিরে যাচ্ছেন। সেই প্রচার রাজা পুরুর কাছে চলে এলো। তবুও তিনি আলেকজান্ডারের যুদ্ধ বাসনা, পুন্য ভুমি ভারতকে কলুষিত করার ইচ্ছাচিরতরে মিটিয়ে দেবার জন্য সিন্ধু পারে অপেক্ষা করলেন। তার তো তাড়া কিছু ছিলো না।
এদিকে এপারে গ্রীক সৈন্যরা তাদের তাবু সাজ সরঞ্জাম সব গোটাতে থাকলো। রাজা পুরু সব দেখছেন। কিছুদিনের মধ্যে বেশ কিছু নৌকা তৈরীহলো। রাজা পুরু খবর পেলেন আলেকজান্ডার নৌপথে দক্ষিনে সিন্ধু নদের পশ্চিম কুল ঘেষে ভারত সাগর দিয়ে চলে যাবেন তার বিজিতবাগদাদে/মতান্তরে ব্যাবিলনে। আর বেশীর ভাগ সৈন্য যাবে উত্তরে অক্সাস নদীর (আমু দরিয়া) পাড় দিয়ে বাগদাদে। আলেকজান্ডারের এইচেষ্টায় পুরু বাধা দিলেন না। বিনা রক্তপাতে আপদ বিদায় হলে ক্ষতি কি???
মাত্র ১০০০০ হাজ্আর সৈন্য রইলো আলেকজান্ডারের সংগে, বাকী সব চললো সিন্ধুর পশ্চিম পাড় দিয়ে উত্তরে। রাজা পুরু তার পুত্রকেপাঠালেন তার সৈন্য বাহিনীর তিন চতুর্থাংশ দিয়ে সিন্ধুর পুর্ব পাড় দিয়ে উত্তরে। প্রায় ১৭ মাইল উত্তরে যাবার পর আলেকজান্ডারের সৈন্যবাহিনী বিশ্রামের জন্য তাবু গাড়লো, পুরু রাজের পুত্র ও পুর্ব পাড়ে তাবু গাড়লেন।
এদিকে পুরু রাজের কাছে আলেকজান্ডার অনুরোধ করলেন তাকে নিরাপদে দক্ষিনে যাবার সুযোগ করে দিতে। অনেক ধুম ধাম করে তারআরাধ্য দেবতা ‘এপোলো’ র পুজো দিলেন, দেশে যাবার যাত্রার শুভ কামনায়। পুরু তার সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে লিখে পাঠালেন , “ আপনিনির্বিঘ্নে যান, কেউ আপনার কেশাগ্র স্পর্শ করবে না। তবে আর কোনোদিন আমার মাতৃভুমি দখল করার স্বপ্ন দেখবেন না”।
সাজ সরঞ্জাম, সৈন্যরা ধীরে ধীরে নৌকায় তোলা হচ্ছে, সেই কাজ চললো। পুরু ৪-৫ দিন পর তার স্ংগে থাকা সৈন্যদের নিয়ে সিন্ধু তীর ছেড়েকিছুটা পুর্বে (প্রায় ৩ মাইল ভিতরে) এসে তাবু গাড়লেন। সেটা এই জন্য যাতে আলেকজান্ডার বুঝতে পারেন যে, তার সৈন্যরা আলেকজান্ডারেরদক্ষিনে যাত্রা পথে কোনো বাধা হবে না। হিন্দু রাজা পুরুর সেই ভালোমানুষিকতার এবং বিশ্বাসের মর্য্যাদা না দিয়ে, আলেকজান্ডার রাতেরঅন্ধকারে স্বসৈন্যে এসে হাজির হলেন সিন্ধু পুর্ব পাড়ে। পুরু রাজ বুঝলেন তাকে তঞ্চকতা করা হয়েছে। সংগে ছিলো মাত্র হস্তীবাহিনী এবং কিছুপদাতিক,সাকুল্যে দশ বারো হাজার। বাকী সব ১৭ মাইল উত্তরে পুত্রের তত্ত্বাবধানে। শুরু হলো যুদ্ধ। কিন্তু আলেকজান্ডারের ঘোড়ার গতিরসংগে এটে ঊঠতে পারলো না ধীর গতির হাতী। ঘোড়ারা প্রায় সব পুত্রের কাছে। রাজা পুরু হার মেনে বশ্যতা স্বীকার করলেন। পুরুর পুত্রযখন এই খবর পেয়ে দক্ষিনে পিতার সাহায্যে এসে পৌছালেন তখন বিকেল এবং যুদ্ধ শেষ। তিনি, সেই রাত্রে চলে গেলেন আবার ঊত্তরে , চলেগেলেন কাশ্মীরে এবং সেখানে বাস করতে লাগলেন, আর সময়ের অপেক্ষায় রইলেন।
রাজা পুরু বন্ধী। আলেকজান্ডার তাকে তার বীরত্বের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে তার প্রতিনিধি হিসাবে থাকতে প্রস্তাব দিলেন। পুরু সেই প্রস্তাবে রাজীহয়ে রাজা হিসাবে ই রইলেন কিন্তু আলেকজান্ডারের কাছে পরাধীন। আলেকজান্ডার এর পর দক্ষিনে চললেন। ইচ্ছা ‘মালী রাজ্য’ দখল করা।পুরু গোপনে সেই সংবাদ দিলেন মালী রাজের কাছে। আলেকজান্ডার যখন মালী রাজ্য আক্রমন করেন তখন মালী সৈন্যরা পুরোপুরি তৈরী ।সেই সময়, যুদ্ধের ঠিক আগে, রাজা পুরু আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে মালী রাজের সংগে হাত মেলালেন। পুরু রাজের পুত্র ওস্বসৈন্যে এসে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করলেন। যে আলেকজান্ডার জীবনে কোনোদিন পরাজিত হন নি, তিনি প্রথম পরাজয়ের কি গ্লানি সেটা অনুভবকরলেন জীবনের এই শেষ যুদ্ধে। দিন শেষে একটি তীর তার বর্ম ভেদ করে, বুকের মাংস ভেদ করে, কন্ঠার হাড়ের ওপরে এসে গেথে গেলো।মালী রাজ এবং পুরু রাজ দুজনে মিলে আলেকজান্ডারের দেহরক্ষীদের বললেন, “তোমাদের রাজা এক মহান যোদ্ধা। উনি আহত । হিন্দুরাআহতকে আর আঘাত করে না। যাও ওকে নিয়ে যাও। শুশ্রুষা করো, আর বেঁচে থাকলে নিজের দেশে চলে যেতে বলো”
আলেকজান্ডার নদী পথে এসে পৌছালেন ভারত মহাসাগরে, তার পর ঢুকলেন মাকরান মরুভুমিতে। সেই মরুভুমি পার করতে তার সংগেথাকা বেশীর ভাগ সৈন্য সামন্ত মারা গেলো। ভগ্ন মনোরথ, অসুস্থ আলেকজান্ডার মারা গেলেন এই যুদ্ধের ঠিক ৩ মাস পর । ২০ বছর বয়ষে, পিতা ফিলিপ -২ কে, নিজের মায়ের সংগে পরামর্শ করে বিষ খাইয়ে মেরে রাজা হয়েছিলেন ম্যসিডোনিয়ার। দেশ থেকে বেরিয়ে,বহু রাজ্য দখলকরে, অসংখ্য মানুষের রক্তে হাত রাংগিয়ে, বিশাল এক সাম্রাজ্য তৈরী করে, উত্তরাধিকার বিহীন আলেকজান্ডার মাত্র ৩২ বছর বয়ষে মারাগেলেন শুন্য হাতে।
Saturday, February 17, 2018
ইতিহাসঃ আলেকজান্ডার এবং ভারতীয় হিন্দুরাজ ‘পুরু’
Tags
# আলেকজান্ডার
# ইতিহাস
About MSS Rehman
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.
ইতিহাস
Labels:
আলেকজান্ডার,
ইতিহাস
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment