কুরআন প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। “আমি আত্মসমর্পণকারীদের (মুসলমানদের) জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা, পথনির্দেশ, দয়া, ও সুসংবাদস্বরূপ আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি। (সূরা নাহল, ১৬ঃ৮৯)।সুবহানআল্লাহ।
জুলকারনাইন অর্থ দুই যুগের বিশ্বাসী পরাশক্তি। আগের যুগে জুলকারনাইন ছিলেন নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম।
প্রথমত, জুলকারনাইনকে অবশ্যই ইহুদিদের পরিচিত ও নিকটবর্তী কোন রাজা হতে হবে। এজন্যই ইহুদিরা তাঁর সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত ছিল এবং রাসুল (সা) কে এ ব্যপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর নব্যুয়াতের পরীক্ষা নিয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, পবিত্র কোরানে জুলকারনাইনের বর্ণনা এমনভাবে এসেছে যেন জুলকারনাইন আল্লাহতালার সাথে কথাবার্তা আদানপ্রদান করতেন।
অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন। [ সুরা কা’হফ: ৮৬ ]
তিনি বললেনঃ যে কেউ সীমালঙ্ঘনকারী হবে আমি তাকে শাস্তি দেব। অতঃপর তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে ফিরে যাবেন। তিনি তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন। [সুরা কা’হফ: ৮৭ ]
অর্থাৎ জুলকারনাইনের উপর ওহী নাযিল হত এবং তিনি আল্লাহর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারতেন। এটা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, জুলকারনাইন নবী-রাসুলদের একজন ছিলেন। অর্থাৎ তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ রাজাও ছিলেন এবং একজন নবীও ছিলেন। তাই কাইরাস, আলেক্সান্ডার এসব নামকে আমরা গারবেজ বিনে ফেলে দিতেই পারি যেহেতু তওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কোরান– কোন আসমানি কিতাবেই তাদেরকে নবী বলা হয়নি। এখন বলুন, ইহুদিদের পরিচিত ও নিকটবর্তী নবী+ন্যায়পরায়ন রাজা কে? অবশ্যই সুলাইমান (আ)।
তৃতীয়ত, যেহেতু জুলকারনাইন নবী ছিলেন, তাই তাঁর কাঁধে তাঁর কওমকে সত্যের পথে আহবানের দায়িত্ব অর্পিত ছিল। এই মহান ও বিশাল দায়িত্ব থাকায় তিনি বছরের পর বছর সফর করে বেড়াবেন, এটা হতে পারে না। কিন্তু তখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে প্রচুর সময় লাগত যেহেতু দ্রুততর যানবাহন ছিল না। তাই জুলকারনাইনকে অবশ্যই এমন কোন ক্ষমতার অধিকারী হতে হত, যার দ্বারা তিনি সহজেই খুব কম সময়ে পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকের স্থানগুলোতে ভ্রমণ করতে পারতেন আর একই সাথে নিজ কওমের প্রতি তাঁর কর্তব্যসমূহও পালন করতে পারতেন। সুলাইমান (আ) এর সেই ক্ষমতা ছিল।
তখন আমি বাতাসকে তার অনুগত করে দিলাম, যা তার হুকুমে অবাধে প্রবাহিত হত যেখানে সে পৌছাতে চাইত। [ সুরা সা’দ: ৩৬ ]
চতুর্থত, জুলকারনাইন ইয়াজুজ মাজুজদের আটকাতে পাহাড়ের উচ্চতা সমান দেয়াল নির্মাণ করেন। এতে তিনি লোহার সাথে গলিত তামা ব্যবহার করেন।
তোমরা আমাকে লোহার পাত দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা গলিত তামা নিয়ে এস, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই। [সুরা কা’হফ: ৯৬]
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, লোহা সেখানে মজুদ ছিল। তাই জুলকারনাইন বলেছিলেন, গিভ মি। কিন্তু গলিত তামা সেখানে মজুদ ছিল না। তাই তিনি বলেছিলেন, ব্রিং মি (নিয়ে এসো)। জুলকারনাইন কোথা থেকে নিয়ে আসতে বলছিলেন এই বিপুল পরিমাণ তামা???
আর আমি সোলায়মানের অধীন করেছিলাম বায়ুকে, যা সকালে এক মাসের পথ এবং বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আমি তার জন্যে গলিত তামার এক ঝরণা প্রবাহিত করেছিলাম…. [সুরা সা’বা: ১২]
অর্থাৎ সুলাইমান (আ) এর গলিত তামার ঝরণা ছিল!!!
কিন্তু ইজরায়েল থেকে ককেশাস পর্যন্ত এত তামা আনা কীভাবে সম্ভব??? তখন তো এরোপ্লেন ছিল না।
َ
সুলায়মান বললেন, হে পরিষদবর্গ, তারা আত্নসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কে বিলকীসের সিংহাসন আমাকে এনে দেবে? [সুরা নাম’ল: ৩৮ ]
জনৈক দৈত্য-জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং আমি একাজে শক্তিবান, বিশ্বস্ত। [সুরা নাম’ল: ৩৯ ]
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন, এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল। [সুরা নাম’ল: ৪০ ]
এখন প্রশ্ন হলো, এত উঁচু দেয়াল যা শক্তিশালী ইয়াজুজ মাজুজ টপকাতে পারেনি, তা কীভাবে জুলকারনাইন বানালেন আধুনিক কোন প্রযুক্তি ছাড়াই?
আর সকল শয়তানকে তার অধীন করে দিলাম, যারা ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী। [সুরা সা’দ: ৩৭]
জুলকারনাইন পাহাড়ের নিকটবর্তী সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কোন খাজনা নেন নি। কারণ তিনি আল্লাহর দেয়া নিয়ামতেই সন্তুষ্ট ছিলেন।
তিনি বললেনঃ আমার পালনকর্তা আমাকে যা দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট…. [সুরা কাহফ: ৯৫]
আর সুলাইমান (আ) ও একইরকম ছিলেন।
অতঃপর যখন দূত সুলায়মানের কাছে আগমন করল, তখন সুলায়মান বললেন, তোমরা কি ধনসম্পদ দ্বারা আমাকে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদের প্রদত্ত বস্তু থেকে উত্তম। বরং তোমরাই তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে সুখে থাক। [সুরা নাম’ল: ৩৬]
বুঝতে পারছেন কী, দুজন একই ব্যক্তি???
জুলকারনাইন আল্লাহতা’লার কাছ থেকে বে-হিসেব অনুগ্রহ পেয়েছিলেন। জুলকারনাইন যখন পশ্চিমাভিযানে যান, সেখানে আল্লাহতা’লা তাকে কী বলেন?
অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে জুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন। [ সুরা কা’হফ: ৮৬]
হযরত সুলাইমান (আ)-ও আল্লাহতালার কাছ থেকে বে-হিসেব অনুগ্রহ লাভ করেন।
এগুলো আমার অনুগ্রহ, অতএব, এগুলো কাউকে দাও অথবা নিজে রেখে দাও-এর কোন হিসেব দিতে হবে না।
[সুরা সা’দ: ৩৯]
যাবুর কিতাবে উল্লেখ রয়েছেঃ
Psalms 72
David to His son Solomon,
1 Give the king thy judgments, O God, and
thy righteousness unto the king’s son.
2 He shall judge thy people with righteousness, and thy poor with judgment.
3 The mountains shall bring peace to the people, and the little hills, by righteousness.
4 He shall judge the poor of the people, he shall save the children of the needy, and shall break in pieces the oppressor.
5 They shall fear thee as long as the sun and moon endure, throughout all generations.
6 He shall come down like rain upon the mown grass: as showers that water the earth.
7 In his days shall the righteous flourish; and abundance of peace so long as the moon endureth.
8 He shall have dominion also from sea to sea, and from the river unto the ends of the earth.
9 They that dwell in the wilderness shall bow before him; and his enemies shall lick the dust.
যুলকারনাইনের প্রচলিত মতবাদ
Kaisar Ahmed নতুন থট। আমি জানতাম সাইরাস দ্য গ্রেট যুলকারনাইন হতে পারে ইতিহাসে সাইরাস ইমান এনেছিল এমন শুনা যায়। দানিয়াল আ ও উযায়ের আ এর পরামর্শে রাজ্য পরিচালনা করতেন আর তাদের পরামর্শেই জেরুজালেমে ইয়াহুদিদের কে ফিরিয়ে আনেন। ইতিহাসেও পাওয়া যায় তিনি ব্ল্যাক সি ও ক্যাস্পিয়ান সি’র দিকে অভিযান করেছিলেন এবং দারিয়াল জর্জ প্রাচীর নির্মাণ করেন।
Ashraf Mahmud সাইরাস দ্য গ্রেট যে জুলকারনাইন নন, তা’ আমি পড়েছি। তবে, জুলকারনাইন কে, তা’ কেউই সনাক্ত ও চিহ্নিত করতে পারেনি। তিনি রহস্যময় ও অজ্ঞাত হিসেবে রয়েই গেছেন।
TF Evan জুলকারনাইন সম্পর্কে যতটা জানার দরকার ততটাই আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন । এর বেশি জেনে আমাদের আর কোন লাভ নেই তাই তিনি রহস্যময় ও অজ্ঞাত ।
শীতল নদীর কোলে আল কোরআনে যে যুলকারনাইনের কথা বলা হচ্ছে তিনি কে ছিলেন, এ বিষয়ে প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে আজও পর্যন্ত মতবিরোধ চলে আসছে। প্রাচীন যুগের মুফাস্সিরগণ সাধারণত যুলকারনাইন বলতে আলেকজাণ্ডারকেই বুঝিয়েছেন। কিন্তু কুরআনে তাঁর যে গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে, আলেকজাণ্ডারের সাথে তার মিল খুবই কম। আধুনিক যুগে ঐতিহাসিক তথ্যাবলীর ভিত্তিতে মুফাসসিরগণের অধিকাংশ এ মত পোষণ করেন যে, তিনি ছিলেন ইরানের শাসনকর্তা খুরস তথা খসরু বা সাইরাস। এ মত তুলনামূলকভাবে বেশী যুক্তিগ্রাহ্য। তবুও এখনো পর্যন্ত সঠিক ও নিশ্চিতভাবে কোন ব্যক্তিকে যুলকারনাইন হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারেনি।
Aktar Khan কুরআন শরীফের সূরা কাহাফের আয়াত নম্বর ৮৩-১০১ অংশে জুলকারনাইন সম্পর্কিত বর্ণনা আছে। নবী হিসেবে জুলকারনাইনের নাম উল্লেখ নেই যদিও কিন্তু তিনি নবী ছিলেন না এমনটিও বলা হয়নি।
No comments:
Post a Comment