মহামতি আলেকজান্ডার (Alexander the Great) :
:
(পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লিখিত জুলকারনাইন ই "আলেকজান্ডার " ছিলেন কীনা তা নিয়েও ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত আছে )
:
(পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লিখিত জুলকারনাইন ই "আলেকজান্ডার " ছিলেন কীনা তা নিয়েও ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত আছে )
মহামতি আলেকজান্ডার (জন্ম - জুলাই খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫৬, মৃত্যু জুন ১১, খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩)পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সফল সামরিক প্রধান। তিনি তৃতীয় আলেকজান্ডার বা মেসিডনের রাজা হিসেবেও পরিচিত। তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ার শাসনকর্তা। মেসিডোনিয়া বর্তমান গ্রীসের অন্তর্গত একটি অঞ্চল। তার পিতা ফিলিপ ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা। তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি পরিচিত পৃথিবীর বেশির ভাগ জয় (টলেমির মানচিত্র অনুযায়ী) করেছিলেন। আলেকজান্ডার তার সামরিক কৌশল ও পদ্ধতির জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। তিনি পারস্যে অভিশপ্ত আলেকজান্ডার নামেও পরিচিত, কারণ তিনি পারস্য সাম্রাজ্য জয় করেন এবং এর রাজধানী পারসেপলিস ধ্বংস করেন। তিনি ফার্সি ভাষায় "ইস্কান্দর, মধ্য পশ্চিমা স্থানে যুল-কারনাইন, আরবে আল-ইস্কান্দার আল কাবের", উর্দুতে সিকান্দার-এ-আজম, পস্তুতে স্কান্দর, হিব্রুতে "আলেকজান্ডার মোকদন, আরমেনিয়ানয়ে ট্রে-কারনাইয়া"। তার এজাতীয় কিছু নামের অর্থ "দুই শিং বিশিষ্ট" (যুল-কারনাইন, ট্রে-কারনাইয়া), আবার উর্দু ও হিন্দিতে সিকান্দার যার অর্থ পারদর্শি" বা অত্যন্ত পারদর্শি।
আলেকজান্ডারের পিতা দ্বিতীয় ফিলিপ তার শাসনামলে গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলোকে নিজের শাসনাধীনে আনেন। আলেকজান্ডার নিজেও এই নগররাষ্ট্রগুলিকে একত্রিত করতে অভিযান চালান কারণ ফিলিপের মৃত্যুর পর এগুলো বিদ্রোহ করেছিল। এরপর আলেকজান্ডার একে একে পারস্য, আনাতোলিয়া, সিরিয়া, ফোনিসিয়া, জুডিয়া, গাজা, মিশর, ব্যাক্ট্রিয়া এবং মেসোপটেমিয়া জয় করেন। তার সাম্রাজ্য মেসিডোনিয়া থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পিতার মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার পশ্চিমে অভিযান চালান ইউরোপ জয় করার জন্য। এরপর তিনি পূর্বে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেন, কারণ শৈশবে তার শিক্ষক বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক, বিজ্ঞানী এরিস্টোটল তাকে বলেছিলেন কোথায় ভূমি শেষ হয় এবং মহাসাগর শুরু হয়। আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে বিদেশী (বিশেষ করে যারা গ্রিক বা মেসিডোনিয়ান নয়) ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেন। এর মধ্যে কিছু জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে "একত্রিকরণ"-এর ব্যাপারে ধারণা দেয়। তিনি তার সেনাবাহিনীতে বিদেশীদের সাথে বিবাহ উৎসাহিত করেন এবং নিজেও বিদেশী মেয়েদের বিয়ে করেন। প্রায় ১২ বছরের সামরিক অভিযানের পর আলেকজান্ডার মৃত্যুবরণ করেন। ধারণা করা হয় হয়ত তিনি ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড অথবা ভাইরাল এনকেফালাইটিস্ এর আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হেলেনেস্টিক যুগে তার অভিযানের কাহিনী লোকের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। আলেকজান্ডারের অভিযানের ফলে বিভিন্ন সভ্যতার মিলন ঘটে (মিশর, গ্রিক, পারস্য, ভারতীয়) এক নতুন সভ্যতার শুরু হয়। এই সভ্যতাই হেলেনেস্টিক সভ্যতা। গ্রিক ও গ্রিসের বাইরের বিভিন্ন সভ্যতায় আলেকজান্ডার ইতিহাসে, সাহিত্যে, পুরাণে জীবিত হয়ে আছেন। বৃটিশ মিউজিয়ামে রাখা আছে মহামতি আলেক্সান্ডারের প্রতিকৃতি ।
শৈশব :
আলেকজান্ডার ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ও তার চতুর্থ স্ত্রী অলিম্পাসের সন্তান। পাউলতার্চ হতে জানা যায় মূলত ফিলিপ আলেকজান্ডারের পিতা ছিলেন না। অলিম্পাস সাপের সাথে থাকতে অভস্থ্য হওয়ায় ফিলিপ তার সাথে মিলিত হতে ভীত ছিলেন এবং জিউস অলিম্পাসের গর্ভে আলেকজান্ডারের জন্মের জন্য দায়ী। পাউলতার্চ আরও বলেন যে, অলিম্পাস ও ফিলিপ উভয়েই তাদের ভবিষ্যত সন্তানের জন্মের স্বপ্ন দেখেছিলেন। অলিম্পাস দেখেন তার গর্ভের ভিতর বজ্রপাত ও আলোকপাত হচ্ছে। ফিলিপের স্বপনে ছিল যে সে অলিম্পাসের গর্ভে সিংহের সিল মেরে দিচ্ছেন। এই স্বপ্নের পর ফিলিপ ভবিষ্যত বক্তা এরিস্টান্ডারের সাথে কথা বলেন। এরিস্টান্ডার বলেন যে, অলিম্পাস গর্ভবতী ও তার সন্তানের সিংহের ন্যায় চরিত্র হবে। আর একটি অলৌকিক ঘটনা হল, আলেকজান্ডারের জন্মের ঠিক সময়ই ইফেসাস এর আর্টেমিস এর মন্দিরে আগুন ধরে যায়। পাউলতার্চ এই ঘটনাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন, সৃষ্টিকর্তা মন্দিরের খেয়াল রাখার থেকেও বেশি আলেকজান্ডারের খেয়াল রাখছিলেন"।
একদিন আলেকজান্ডার তার পিতার সাথে হাটছিলেন। তারা একস্থানে এসে দেখলেন কতগুলো লোক একটি কাল পাগলা ঘোড়াকে বশে আনতে চেষ্টা করছে। আলেকজান্ডারের ঘোড়াটাকে পছন্দ হল এবং তিনি তার পিতার কাছে আর্জি করলেন তাকে ঐ ঘোড়াটা কিনে দিতে। ফিলিপ হেসে বললেন, তুমি যদি ঘোড়াটাকে বশে আনতে পারেন, তবেই ঘোড়াটাকে তুমি পেতে পার। আলেকজান্ডার ঘোড়াটাকে ভাল মত লক্ষ্য করে বুঝতে পারলো, আসলে ঘোড়াটা তার নিজের ছায়া (ঘোড়ার) প্রতি ভীত। সে ঘোড়াটার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং ওটাকে সূর্যের দিকে মুখ করালেন যেন সে তার নিজের ছায়ার দিকে লক্ষ্য করতে না পারে। ফলশ্রুতিতে, ঘোড়াটা সহজেই বশে আসলো। ফিলিপ ঘোড়াটাকে আলেকজান্ডারকে কিনে দিলেন। আলেকজান্ডার ঘোড়াটার নামকরণ করলেন, বুসেফেলাস (যার অর্থ ষাড়ের মাথা)। বুসেফেলাস আলেকজান্ডারের শেষ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত সকল যুদ্ধে আলেকজান্ডারের সাথে ছিল। ভারত হতে ফেরার সময় আলেকজান্ডারে বুসেফেলাসের নামে একটি স্থানের নামকরণ করেন।
মেসিডোনিয়ার রাজত্ব
মেসিডোনিয়ার রাজত্ব
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪০ সালে ফিলিপ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে আক্রমণ করেন। তখন, ১৬ বছর বয়সি আলেকজান্ডার মেসিডোনিয়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৯ সালে ফিলিপ মেসিডোনিয়ান ক্লিওপেট্রাকে তার পঞ্চম স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। আলেকজান্ডারের মা অলিম্পাস ছিলেন ইপিরাস (পশ্চিম গ্রিক উপত্যকার ভূমি) হতে। ইপিরাস মেসিডোনিয়ার অংশ ছিল না, অপরদিকে ক্লিওপেট্রা ছিলেন পুরোপুরি মেসিডোনিয়ান। ফলে, ফিলিপ উত্তরাধিকারী হিসেবে আলেকজান্ডারের অবস্থান প্রশ্ন বিদ্ধ্ব হয়ে পরে। ক্লিওপেট্রার চাচা অ্যাটলাস, ফিলিপ-ক্লিওপেট্রার বিয়ের ভোজ-সভায় ঘোষণা দেন, এই ভোজ-অনুষ্ঠানই নির্দেশ করবে ভবিষ্যত মেসিডোনিয়ার শাসক কে হবে। আলেকজান্ডার তখন তার পেয়ালা অ্যাটলাসের দিকে ধরে চিৎকার করে বলেন, "তবে আমি কে, জারজ সন্তান? ফিলিপ তখনই তার তোলোয়ার উম্মুক্ত করে আলেকজান্ডারের দিকে ধরে কিছু বলতে যান, কিন্তু অধিক পান করার জন্য ফিলিপ সেখানেই লুটিয়ে পরেন। আলেকজান্ডার ঐ স্থানে তখন বলেন, "এখানে একব্যক্তি (আলেকজান্ডার স্বয়ং) গ্রিস থেকে এশিয়া জয় করতে পরিকল্পনা করছে, তাকে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে সরানো যাবে না"। এরপর আলেকজান্ডার, তার মা অলিম্পাস ও বোন ক্লিওপেট্রা রাগ করে মেসিডোনিয়া ছেড়ে চলে যান।
পরবর্তীতে ফিলিপ তার ছেলেকে মানিয়ে নেন এবং আলেকজান্ডার বাড়ি ফিরে আসেন। অলিম্পাস ও আলেকজান্ডারের বোন ইপিরাসে থেকে যান। আলেকজান্ডার তার পিতাকে ক্যারোনিয়ার যুদ্ধে (খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৮ সাল) সাহায্য করেন। এ যুদ্ধে ছিল, এথেন্স এবং থিবস্ এর নগর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে অশ্বরোহি বাহিনী থিবস্-এর বিশেষ বাহিনীকে পরাজিত করেন। এই বাহিনী অপ্রতিরোধ্য বলে পরিচিত ছিল। যুদ্ধের পর ফিলিপ একটি ভোজনসভার আয়োজন করেন। আলেকজান্ডার এতে অনুপস্থিত ছিলেন। ফিলিপ বিওশিয়া হতে থিবস্ দখলের পর অনেকটা সন্তুষ্ট ছিলেন এবং মেসিডোনিয়ান বাহিনীকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে রেখে চলে আসেন। কয়েকমাস পর, গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলিতে মেসিডোনিয়ার শক্ত নিয়ন্ত্রণ রাখার উদ্দেশ্যে লীগ অফ করিন্থ League of Corinth গঠন করা হয়।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৬ সালে ইপিরাস রাজা প্রথম আলেকজান্ডারের সাথে ফিলিপের মেয়ে ক্লিওপেট্রার বিবাহের সময় খুন হন। ধারণা করা হত ফিলিপের খুনের পরিকল্পনাকারী আলেকজান্ডার অথবা অলিম্পাস। আবার এটা ও ধারণা করা হয়, পারস্যের তৃতীয় দারিয়ুস যে কিনা, সম্প্রতিই পারস্যের শাহানশাহের পদ গ্রহণ করেছিলেন সেও ফিলিপের খুনের কারণ হতে পারে। ফিলিপের মৃত্যুর পর সেনাবাহিনী আলেকজান্ডারকে মেসিডোনিয়ার রাজা হিসেবে ঘোষণা দেয়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র বিশ। গ্রিক নগর রাষ্ট্র তরুণ আলেকজান্ডার ক্ষমতা গ্রহণের সাথে সাথে স্বাধীনতার জন্য বিদ্রোহ ঘোষণা করল। আলেকজান্ডার খুব দ্রুত অভিযান পরিচালনা করলেন। থিবস্ নগরীর প্রধান ফটকে আসার পরেই থিবস্বাসী অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। বিদ্রোহকারী অঞ্চলগুলোর মধ্যে থিবস্ই সবথেকে বেশি সক্রিয় ছিল। করিন্থ প্রণালীতের গ্রিকদের সম্মেলনে স্পার্টা ছাড়া সকল রাষ্ট্রই আলেকজান্ডারকে পারস্যের বিরুদ্ধে অভিযানে আলেকজান্ডারের নেতৃত্ব গ্রহণে সম্মত হয়। এর আগে এই দায়িত্ব ফিলিপের উপর ন্যাস্ত ছিল।
পরবর্তি বছর (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৫) সালে আলেকজান্ডার মেসিডোনিয়ার উত্তর সিমান্তের ডানবির নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। আলেকজান্ডার যখন উত্তরে অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন, তখন আবার থিবস্ ও এথেন্স বিদ্রোহ করে। এইবার থিবস্ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আলেকজান্ডারের সামনে তারা টিকতে পারে নাই, এবং অনেক রক্তপাতের পর আলেকজান্ডার থিবস্ জয় করেন। আলেকজান্ডার থিবস্ নগরীকে ধ্বংস করে দেন এবং এর অঞ্চলসমূহ বিওশিয়ান নগর গুলির ভিতর ভাগ করে দেন। নগরীর সকল নাগরিককে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। শুধুমাত্র পুরোহিত, মেসিডোনিয়ার আগের নেতারা ও পিন্দারের বংশধরদের মুক্তি দেওয়া হয়। শুধুমাত্র পিন্দারের বাড়িটিই অভিযানের পর দন্ডায়মান ছিল। থিবস্ এর পরই ভীত এথেন্সবাসি আত্মসমর্পণ করে। মেসিডোনিয়া বিরোধী নেতাদের (সবার আগে ডিমোস্থেন্স) দেশত্যাগের শর্তে আলেকজান্ডার এথেন্সবাসিকে ছাড় দেন।
বিশ্ব জয় :
আলেকজান্ডারের পারস্য অভিযানের পূর্বে গ্রিকদের কাছে জানা ছিল, পৃথিবীর মোট চার-পঞ্চমাংশই পারস্য সাম্রাজ্য এবং এ যাবৎ কেউ পারস্য জয় করতে পারেননি। পারস্যের রাজধানী ব্যাবিলন গ্রিকদের কাছে ছিল এক স্বপ্ন নগরী। গ্রিকরা পন্ডিতরা তাদের সন্তানদের শেখাতেন পার্সিয়ানরা হচ্ছে বর্বর (বারবেরিয়ান) আর গ্রিকরা হচ্ছে সভ্য। তাই তারা পারস্যের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। এই জাতীয় কথা আলেকজান্ডার শেখেন তার গুরু বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটোলের কাছ থেকে। তখন আলেকজান্ডার ভাবতেন গ্রিকরা যদি পার্সিয়ানদের থেকে উন্নতই হয়, তবে কেন তারা পারস্য জয় করছে না ?
পারস্যের পতন :
আলেকজান্ডার তার ৪২,০০০ সৈন্যের সেনাবাহিনী নিয়ে হেলিস্পন্ট অতিক্রম করেন। সৈন্যদের মধ্যে বেশীরভাগ ছিল মেসিডোনিয়ান এবং গ্রিক। তাছাড়াও কিছু থ্রাসিয়ান, পাইওনিয়ান এবং ইলিরিয়ান। গ্রানিকাসের যুদ্ধে পারস্যের সেনাবাহিনীর পরাজয়ের পর আলেকজান্ডার পারস্যের প্রাদেশিক রাজধানী ও সার্দিসের অর্থভান্ডার দখল করেন। এরপর তিনি আইওনিয়া উপকুল ধরে এগিয়ে যান। হেলিকারনাস-এ আলেকজান্ডার সফলভাবে যুদ্ধের দ্বারা বিভিন্ন বাঁধা অতিক্রম করেন। তার বিপক্ষের রোডস্-এর মেমন এবং কারিয়ার পারস্যিয়ান সাত্রাপ সমুদ্র পথে পালিয়ে যায়। আলেকজান্ডার কারিয়ার শাসন ভার এডার কাছে ছেড়ে দেন। এডাকে তার ভাই পিক্সোদারাস ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। হেলিকারনাসাস্ হতে আলেকজান্ডার পাহাড়ী লিসিয়া এবং প্যামফিলিয়ান সমতল ভূমি বরাবর চলতে থাকেন। পথে তিনি সকল উপকূলীয় শহর দখল করেন এবং এগুলোর শাসকদের শত্রু ঘোষণা করেন। প্যামফিলিয়া থেকে সামনে আর কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থান না থাকায় আলেকজান্ডার ভূমির দিকে অভিযান শুরু করেন। টারমেসাসে আলেকজান্ডার পিসিডিয়া দখল করলেও তেমন ধ্বংসযজ্ঞ করেন নাই।
প্রাচীন ফিজিয়ান রাজধানী গোড়ডিয়ামে পৌঁছলে সেখানে তাকে জানানো হয়, সেখানে অ্যাপোলোর মন্দিরে একটি দড়ির জট রাখা আছে। পুরাণে আছে যে এই জট খুলতে পারবে সে হবে "এশিয়ার রাজা"। পুরোহিতদের এই কথা শোনার পর, আলেকজান্ডার বললেন কিভাবে জট খোলা হল তা ব্যাপার নয়। তিনি ঐ মূহুর্তে তার তলোয়ার খুলে জটটি কেটে ফেলেন। তবে এটাও শোনা যায়, তলোয়ার দিয়ে নয়, বরং আলেকজান্ডার বের করেন কিভাবে এ জট খোলা সম্ভব।
আলেকজান্ডার ও বুসেফেলাস (দারিয়ুস এর সাথে যুদ্ধে) :
আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনী নিয়ে সিসিলিয়ান দরজা পার করেন এবং ইসাস এর যুদ্ধে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৩-এ পারস্য সম্রাট তৃতীয় দারিয়ুসের সাথে মিলিত হন। সেখানে আলেকজান্ডার দারিয়ুসকে পরাজিত করেন এবং দারিয়ুস তার প্রাণ বাচিয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু তিনি তার স্ত্রী, দুই কন্যা, তার মা সিসিগাম্বিস্ এবং তার ব্যক্তিগত সম্পদের বেশির ভাগ ফেলে যান। দারিয়ুস ভূ-মধ্যসাগরের উপকুল ধরে টায়ার এবং গাজা হয়ে চলে যান। এদিকে আলেকজান্ডার জেরুজালেমের নিকটবর্তি জুডিয়া দিয়ে এগিয়ে যান। তবে আলেকজান্ডার জেরুজালেমে প্রবেশ করেন নাই।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩২-৩৩১ সালে আলেকজান্ডারকে মিশরে মুক্তিদাতা হিসেবে স্বাগতম জানানো হয়। সিউয়া মরুভুমিতে আমুনের (মিশরে জিউসের সমমর্যাদা সম্পন্ন দেবতা) মন্দিরে পুরোহিতরা আলেকজান্ডারকে জিউসের পুত্র হিসেবে ঘোষণা করে। ইতিমধ্যে, আলেকজান্ডার জিউসকে নিজের পিতা বলে স্বীকার করেন, কারণ সেই সময়ের মুদ্রায় আলেকজান্ডারের প্রতিচ্ছবিতে তার মাথায় ভেড়ার শিং থাকত। আলেকজান্ডার মিশরে আলেকজান্ড্রিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর এই আলেকজান্ড্রিয়া মিশরে টলেমী শাসকদের রাজধানীতে হয়। মিশর জয়ের পর আলেকজান্ডার আরো পূর্বে আসরিয়ার (বর্তমানে উত্তর ইরাক) দিকে অভিযান করেন। সেখানে দারিয়ুস এর নেতৃত্বে গৌগামেলার (Battle of Gaugamela) যুদ্ধে তৃতীয় পারস্য সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন। যুদ্ধে দারিয়ুসের রথের সারথীর মৃত্যুবরণ করলে দারিয়ুস আবার পালাতে থাকেন এবং আলেকজান্ডার তাকে আরবেলা পর্যন্ত ধাওয়া করেন। দারিয়ুস ইকবাটানা পাহাড়ে আশ্রয় নিলে আলেকজান্ডার ব্যাবিলনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
ব্যাবিলন থেকে আলেকজান্ডার অন্যতম অ্যাকামেনিড রাজধানী সুসাতে যান এবং এর কোষাগার দখল করেন। সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ রয়েল রোড হয়ে পারস্যের রাজধানী পার্সেপলিস্ পাঠিয়ে দেন। অন্যদিকে, নিজে দ্রুত পারস্য দরজা দখল করেন (আধুনিক জাগরস্ পর্বতে) এবং তারপরই দ্রুত পার্সেপলিস্ এর রাজকোষ লুট হবার আগেই সেখানে চলে যান। এর পরবর্তি কয়েক মাস আলেকজান্ডার সেনাবাহিনীকে পার্সেপলিস্ লুট করতে দেন। এসময় পার্সেপলিসের পূর্ব দিকের প্রাসাদ যেরসেক্সে (Xerxex) আগুন লেগে তা পুরো শহরে ছড়িয়ে যায়।
আলেকজান্ডার এর পর দারিয়ুসের বিকল্পের সন্ধান করতে থাকেন। এদিকে, দারিয়ুস অপহৃত হন। তার ব্যাক্ট্রিয়ার গভর্নর, বেসাস্ ও এক পুরুষ আত্মীয়ের সহকারীরা তাকে হত্যা করে। বেসাস্ নিজেকে দারিয়ুসের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে এবং আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের পরিকল্পনা করে মধ্য এশিয়ার দিকে হটতে থাকেন। দারিয়ুসের মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার প্রতিশোধের এই যুদ্ধের ইতি ঘোষণা করেন এবং গ্রিক ও অন্যান্য মিত্রদের লীগ অফ করিন্থ হতে মুক্ত করে দেন। তবে, যারা স্বেচ্ছায় তার সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণে উৎসাহী ছিল তিনি তাদের সেনাবাহিনীতে গ্রহণ করেন।
আলেকজান্ডার প্রায় তিন বছর প্রথমে বাসাস্ এবং পরে সোগডিয়ানা, স্পিটামেনস্-এর গভর্নরদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। এই অভিযান চালাতে গিয়ে আলেকজান্ডার মিডিয়া, পার্থিয়া, আরিয়া, ড্রাজিয়ানা, আর্কোশিয়া, ব্যাক্ট্রিয়া এবং সিথিয়া জয় করেন। তিনি হেরাত এবং সমরখন্দ দখল ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। আলেকজান্ডার অনেকগুলো নতুন আলেকজান্ড্রিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলোর মধ্যে আছে আধুনিক কালের আফগানিস্তানের কান্দাহার এবং আলেকজান্ড্রিয়া ইসচেট (বর্তমানে তাজাকিস্তানে)। উভয়ই পরবর্তিতে বিদ্রোহ করে। বেসাস্ খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৯-এ ও স্পিটামেনস্-এর পরের বছর।
ভারত অভিযান :
ম্যাসিডনের রাজা আলেকজান্ডারের ভারতবর্ষ আক্রমণ ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পারস্য বিজয়ে পর শুরু হয় তার ভারত আগ্রাসন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১ অব্দে তিনি পারস্য সাম্রাজ্য আক্রমণ করেন। সে সময় সিন্ধুনদ পারস্য সাম্রাজ্যের সীমানা ছিল। আলেকজান্ডারের ভারতবর্ষ আক্রমণের প্রাক্কালে উত্তর-পশ্চিম ভারত পরস্পরবিরোধী অনেকগুলো রাজ্যে বিভক্ত ছিল। তাদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বহিরাক্রমণ ঠেকানো সম্ভবপর ছিল না। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৮ অব্দের মধ্যে সমগ্র পারস্য এবং আফগানিস্তান আলেকজান্ডারের দখলে আসে। অত:পর আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে ভারত অভিমুখে অগ্রসর হন। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে তিনি ভারত নাম ভূখণ্ডে পদার্পণ করেন। আলেকজান্ডার পুষ্কলাবতীর রাজা অষ্টককে পরাভূত করেন, অশ্বক জাতিও তার নিকট পরাভূত হয়, তক্ষশীলার রাজা তার নিকট স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে, ঝিলাম রাজ পুরু বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাভব মানতে বাধ্য হনঅ অত:পর আরেকজান্ডার রাভি নদীর উপকূলবর্তী রাজ্যসমূহ দখল করেন এবং বিপাশা নদী পর্যন্ত অগ্রসর হন। এই স্থলে তার রণক্লান্ত সেনাবাহিনী দেশে প্রত্যাবর্তনে উণ্মুখ হয়ে পড়লে আলেকজাণ্ডার ভারত অভিযান বন্ধ করে গ্রীসে প্রত্যাবর্তন শুরু করেন। প্রত্যার্তনের পথে তিনি বেলুচিস্তান ও পাঞ্জাব অধিগত করেন্ ঝিলাম ও সিন্ধু নদের অন্তবর্তী সকল রাজ্য তার অধিগত হয়। ভারত ভূঘণ্ডে আরেকজাণ্ডার প্রায় ১৯ মাস অবস্থান করেছিলেন। তিনি ভারত ত্যাগের পর প্রায় দুই বৎসরকাল তার বিজিত অঞ্চলসমূহে গ্রীক শাসন বজায় ছিল। ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পর খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে ব্যবিলনে তার অকাল মৃত্যু হয়। অন্যদিকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের নেতৃত্বে মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা পাঞ্জাবে গ্রীক শাসনের অবসান ত্বরান্বিত করে।
আলেকজান্ডার ও গঙ্গারিডই :
সম্রাট আলেকজান্ডার সুদূর গ্রিস থেকে একের পর এক রাজ্য জয় করে ইরান আফগানিস্তান হয়ে ভারতের পাঞ্জাবে পৌছে যায়। সুদর্শন তরুণ সম্রাটের চোখে সারা পৃথিবী জয়ের স্বপ্ন। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালী সেনাবাহিনীর অধিকারি তিনি। বিখ্যাত ইরান সম্রাট দারায়ুস থেকে শুরু করে উত্তর পশ্চিম ভারতের পরাক্রমশালী রাজা পুরু পর্যন্ত কেউ তার সামনে দাড়াতে পারে নাই। এখন তার সামনে মাত্র একটা বাধা, বিপাশা নদীর ওপারের গঙ্গারিডই রাজ্য। ভারতের মূল ভুখন্ড। এটুকু করতলগত হলেই সমগ্র ভারত তার দখল হয়ে গেল। যে স্বপ্ন নিয়ে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন গ্রিক রাষ্ট্র মেসিডোনিয়া থেকে, তা পরিপূর্ণতা পাবে।
এদিকে গঙ্গারিডই রাজ্যের রাজা তার বিশাল বাহিনী নিয়ে নদীর এপাড়ে আলেকজান্ডারকে প্রতিহত করতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। গঙ্গারিডই সম্পর্কে প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন ঐতিহাসিকগণের লেখায় তথ্য পাওয়া যায়।
মেগাস্থিনিস(৩৫০ খ্রিষ্টপূর্ব-২৯০ খ্রিষ্টপূর্ব) আলেকজান্ডারের সেনাপতি ও বন্ধু সেলুকাসের রাজত্বকালে গ্রিক দূত হিসাবে ভারতে এসেছিল। তিনি লিখেন- ‘গঙ্গারিডাই রাজ্যের বিশাল হস্তী-বাহিনী ছিল। এই বাহিনীর জন্যই এ রাজ্য কখনই বিদেশি রাজ্যের কাছে পরাজিত হয় নাই। অন্য রাজ্যগুলি হস্তী-বাহিনীর সংখ্যা এবং শক্তি নিয়া আতংকগ্রস্ত থাকিত’
‘ভারতের সমূদয় জাতির মধ্যে গঙ্গারিডাই সর্বশ্রেষ্ঠ। এই গঙ্গারিডাই রাজার সুসজ্জিত ও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত চার হাজার হস্তী-বাহিনীর কথা জানিতে পারিয়া আলেকজান্ডার তাহার বিরূদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হইলেন না’ - ডিওডোরাস (৯০ খ্রিষ্টপূর্ব-৩০ খ্রিষ্টপূর্ব)
গঙ্গাড়িডই রাজ্যের প্রকান্ড সেনাবাহিনী বর্ণনার ক্ষেত্রে ভারতীয় ও ধ্রুপদী ইউরোপীয় রচনাগুলির উল্লেখে প্রচুর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ডিওডোরাস ও ক্যুইন্টাস কার্টিয়াস রুফাস উভয়েই উল্লেখ করেছেন নন্দরাজের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিভাগ সম্বন্ধে। যথা- পদাতিক সৈন্য ২ লক্ষ, অশ্বারোহী সৈন্য ২০ হাজার, রথ ২ হাজার, এবং তিন থেকে চার হাজার হাতি।
ধ্রুপদী গ্রিক ও ল্যাটিন বর্ণনায় রাজার নাম আগ্রাম্মেস। তিনি ছিলেন নীচকূলোদ্ভব নাপিতের পূত্র। হিন্দু পুরাণে তিনি মহাপদ্মনন্দন এবং বৌদ্ধ শাস্ত্র মাহাবোধিবংশে উগ্রসেন, অর্থ এমন এক ব্যক্তি যাঁর ‘প্রকান্ড ও পরাক্রান্ত সেনাবাহিনী’ আছে। হেমচন্দ্রের পরিশিষ্টপর্ব নামক জৈন গ্রন্থেও মহাপদ্মনন্দকে বলা হয়েছে নাপিত কুমার। পুরাণে বলা হয়েছে শূদ্রোগর্ভোদ্ভব। আরও বলা হয়েছে, ‘সর্বক্ষত্রান্তক নৃপঃ’ অর্থাৎ সকল ক্ষত্রিয়কে নিধন করে সিংহাসনে বসেছিল।
এই পর্যন্ত আলোচনায় গঙ্গারিডাই নামের পরাক্রান্ত রাজ্যের প্রমাণ পাওয়া গেল। যেটা ছিল পাঞ্জাব পর্যন্ত সমূদয় গঙ্গা অববাহিকায় নিয়ে গঠিত ভারতের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালি রাজ্য। বিজিত স্থানীয় ছোট ছোট ভূস্বামীরা আলেকজান্ডারকে জানাল অপর পাড়ের দেশটির ঐশ্বর্যের কথা, অপরাজেয় সৈন্যবাহিনীর কথা।
এরপর পৃথিবী বিখ্যাত এ অসীম সাহসী বীর করণীয় আলোচনার জন্য নিজের সেনাবাহিনীর সাথে পরামর্শে বসলেন এবং গঙ্গাড়িডই জয় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সৈন্যরা এমনিতেই বছরের পর বছর যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত। তাছাড়া নদীর ঐপাড়ের ভয়াবহ সেনাবাহিনীর মোকাবেলায় অপরাগতা প্রকাশ করল। বিচক্ষণ সেনাপতি সৈন্যদের পক্ষ হয়ে জানাল সৈন্যরা কেউ বিপাশা পার হয়ে নিজের জীবন দিয়ে আসতে রাজী নয়, তারা পিতামাতা, স্ত্রী, সন্তান ও জন্মভুমিতে ফিরে যাওয়ার হন্য উদ্গ্রীব। এভাবে সৈন্যদের অনাগ্রহের ফলে পাঞ্জাবের বিপাশা নদীর অপর পাড়েই গ্রিক বাহিনীর বিজয় রথ থেমে যায়। আলেকজান্ডার এরপর গ্রিক বাহিনীকে মেসিডোনিয়ার দিকে ফিরতি যাত্রার নির্দেশ দেন।
বিখ্যাত বাঙালি ঐতিহাসিক ড. নীহাররঞ্জন রায় এর লিখেছেন-
“ আজ এ-তথ্য সুবিদিত যে, ঔগ্রসৈন্যের সমবেত প্রাচ্য-গঙ্গারাষ্ট্রের সুবৃহৎ সৈন্য এবং তাহার প্রভূত ধনরত্ন পরিপূর্ন রাজকোষের সংবাদ আলেকজান্দারের শিবিরে পৌছিয়াছিল এবং তিনি যে বিপাশা পার হইয়া পূর্বদিকে আর অগ্রসর না হইয়া ব্যাবিলনে ফিরিয়া যাইবার সিদ্ধান্ত করিলেন,( তাহার মূলে অন্যান্য কারণের সঙ্গে এই সংবাদগত কারণটিও অগ্রাহ্য করিবার মত নয় )
“ আজ এ-তথ্য সুবিদিত যে, ঔগ্রসৈন্যের সমবেত প্রাচ্য-গঙ্গারাষ্ট্রের সুবৃহৎ সৈন্য এবং তাহার প্রভূত ধনরত্ন পরিপূর্ন রাজকোষের সংবাদ আলেকজান্দারের শিবিরে পৌছিয়াছিল এবং তিনি যে বিপাশা পার হইয়া পূর্বদিকে আর অগ্রসর না হইয়া ব্যাবিলনে ফিরিয়া যাইবার সিদ্ধান্ত করিলেন,( তাহার মূলে অন্যান্য কারণের সঙ্গে এই সংবাদগত কারণটিও অগ্রাহ্য করিবার মত নয় )
মৃত্যু :
ভারত থেকে ব্যাবিলনে ফিরিয়া যাইবার পরআলেকজান্ডার ৩২৩ খ্রিষ্টপূর্ব জুন মাসের ১১ অথবা ১২ তারিখে ব্যাবিলনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৩২ বছর।
আলেকজান্ডার এর শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য তার বাবার সান্নিধ্যে গঠিত। তার মায়ের খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল এবং তিনি আলেকজান্ডারকে বিশ্বাস করতে উৎসাহিত করতেন যে পারস্য সাম্রাজ্য জেতাই তার নিয়তি।
No comments:
Post a Comment