আলেকজান্ডার জাতিতে ছিলেন আর্য গ্রিক। তিনি ছিলেন ম্যাডিসনের রাজা ফিলিপসের পুত্র। বাল্যকালে তিনি প্রখ্যাত গ্রিক এরিস্টটল ছিলেন তার শিক্ষক।খ্রীষ্টপূর্ব ৩৩৫ অব্দে রাজা ফিলিপসের মৃত্যু হলে তিনি ম্যাডিসনের সিংহাসনে বসেন।আলেকজান্ডার খ্রীষ্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে ভারত আক্রমণ করেন।৩২৬ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাবাহিনী মগধের নন্দ সাম্রাজ্যের সীমানার দিকে অগ্রসর হয় । এই সেনাবাহিনী ক্লান্ত ছিল এবং গঙ্গা নদীর কাছাঁকাছি বিশাল ভারতীয় বাহিনীর মুখোমুখি হতে ভয় পেয়ে যায় । এই বাহিনী বিয়াসের কাছে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং আরও পূর্বদিকে যেতে অস্বীকার করে । আলেকজান্ডার তখন তাঁর সহকারী কইনাস (Coenus) এর সাথে দেখা করার পরে ঠিক করেন ফিরে যাওয়াই ভাল ।খ্রীষ্টপূর্ব ৩২৫ অব্দে ব্যাবিলনে তার মৃত্যু হয়।মৌর্য সাম্রাজ্য মগধেই গড়ে উঠেছিল । মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ।
বাংলায় মৌর্য যুগ
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য (খ্রীষ্টপূর্ব ৩২৮ – খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০):
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম সাম্রাজ্যের নাম মৌর্য সাম্রাজ্য। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য খ্রীষ্টপূর্ব ৩২১ অব্দে মগধের সিংহাসনে আরোহনের মাধ্যমে মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভারতের প্রখম সম্রাট।পাটলিপুত্র (পাটনা)ছিল তার রাজধানী। চাণক্য ছিলেন তার প্রধানমন্ত্রী। চাণক্য এর বিখ্যাত ছদ্মনাম কৌটিল্য। যা তিনি তার বিখ্যাত সংস্কৃত গ্রন্থ “অর্থশাস্ত্র “ এ গ্রহন করেছেন। রাষ্ট্রশাসন ও কূটনীতিকৌশলের সার সংক্ষেপ ছিল এই অর্থশাস্ত্র। তিনি আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলিউকাসকে পরাজিত করে এই উপমহাদেশ হতে তাড়িয়ে দেন।সেনাপতি সেলিউকাস খ্রীষ্টপূর্ব ৩০২ অব্দে মেগাস্থিনিস নামক একজন গ্রিক দূতকে চন্দ্রগুপ্তের রাজদরবারে প্রেরণ করেছিলেন।তিনি কয়েকবছর অবস্থান করে মৌর্য শাসন নিয়ে তার অভিজ্ঞতা ইন্ডিকা নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন।
সম্রাট অশোক ((খ্রীষ্টপূর্ব ২৭৩ – খ্রীষ্টপূর্ব ২৩২):
মৌর্য বংশের তৃতীয় সম্রাট ছিলেন অশোক। উত্তর বাংলায় মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে। এটি মৌর্যদের একটি প্রদেশে পরিণত হয়েছিল। প্রাচীন পুন্ডনগর ছিল এ প্রদেশের রাজধানী। মহাস্থানগড়ে সম্রাট অশোকের একটি শিলালিপি পাওয়া গেছে। ‘ কলিঙ্গের যুদ্ধ ’ সম্রাট অশোকের জীবনে ছিল এক মাইলস্টোন। কলিঙ্গ রাজ পরাজিত হন এবং একলক্ষ লোক নিহত হয়। কলিঙ্গ যুদ্ধের রক্তস্রোত অশোকের মনে গভীর রেখাপাত করে।তখন তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেন। তার আমলে বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্ব ধর্মের পরিচিতি পায়। এজন্য তাকে ‘ বৌদ্ধধর্মের কনস্ট্যানটাইন ’ বলা হয়।
বৃহদ্রথ:
মৌর্য বংশের সর্বশেষ সম্রাট।
বাংলায় গুপ্ত যুগ
গুপ্তযুগকে প্রাচীন ভারতের স্বর্ণযুগ বলা হয়। এ যুগে সাহিত্য, বিজ্ঞান, ও শিল্পের থুবই উন্নতি হয়।
প্রথম চন্দ্রগুপ্ত (৩২০ – ৩৪০ খ্রিষ্টাব্দ):
ভারতে গুপ্তবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রথম চন্দ্রগুপ্ত। তিনি ৩২০ খ্রিষ্টাব্দে পাটলিপুত্রের সিংহাসনে বসেন।
সমুদ্র গুপ্ত (৩৪০ – ৩৮০ খ্রিষ্টাব্দ):
চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর সমুদ্রগুপ্ত পাটলিপুত্রের সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন গুপ্ত বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তাকে প্রাচীন ভারতের নেপোলিয়ন বলা হয়। তার আমলে সমতট ছাড়া বাংলার অন্যান্য জনপদ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। গুপ্ত আমলেও বাংলার রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র।
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত (৩৮০ – ৪১৫ খ্রিষ্টাব্দ):
সমুদ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পাটলিপুত্রের সিংহাসনে বসেন। তার উপাধি ছিল ’ বিক্রমাদিত্যে ‘। অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি তার দরবারে ছিলেন। যেমন কালিদাস, বিশাখ দত্ত, আর্যদেব, সিদ্ধসেন. দিবাকর প্রমূখ। আর্যভট্ট ও বরাহমিহির ছিলেন সেই সময়ের বিখ্যাত বিজ্ঞানী। সবার আগে পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতি নির্ণয় করেছিলেন আর্যভট্ট ‘ আর্য সিদ্ধান্ত ‘ তার গ্রন্থের নাম। বরাহমিহির ছিলেন জ্যোতির্বিদ। তার গ্রন্থের নাম ‘ বৃহত সংহিতা ‘। এ সময় ফা-হিয়েন ভারতে আসেন। তিনি ছিলেন বিখ্যাত চীনা পর্যটক।১০ বছর ভারতে থাকাকালে তিনি ৭টি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মাঝে ‘ ফো-কুয়ো-কিং ‘ উল্লেখযোগ্য।
এর প্রায় ১০০ বছর পর ৬ষ্ঠ শতকের প্রথম দিকে মধ্য এশিয়ার যাযাবর হুন জাতির আক্রমণে ভেঙ্গে যায় গুপ্ত সাম্রাজ্য।
গুপ্ত পরবর্তী যুগ
হর্ষবর্ধন (৬০৬ – ৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দ):
হর্ষবর্ধন পুষ্যভূতি বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তার সময়ের বিখ্যাত সাহিত্যিক ছিলেন বানভট্ট। বানভট্টের বিখ্যাত গ্রস্থ ‘ হর্ষচরিত ‘।এ সময়ের বিবরণ পাওয়া যায় চীনা পন্ডিত হিউয়েন সাং এর বিবরণে।হর্ষবর্ধনের দরবারে তিনি ৮বছর কাটান। তিনি বলেন কনৌজ ছিল এ সময়ের রাজধানী।তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় বলে জানিয়েছেন। এটাকে বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় মনে করা হয়।
No comments:
Post a Comment